#ভূত_চতুর্দশীর_রাত
পর্ব ২ : ছায়ার গল্প
রাত গভীর। বিজনপুর গ্রামের চারদিকে প্রদীপের আলো ছড়িয়ে আছে, কিন্তু বাতাসে এখনো সেই রহস্যময় শীতলতা। মিঠি ঘরের বারান্দায় বসে, হাতে সেই প্রদীপটা ধরে রেখেছে—যেটা বৃদ্ধা তাঁকে দিয়েছিলেন। আলোটা নিভে না, যতই বাতাস বইছে।
মা লাবণ্য ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছেন। বাড়ি নিস্তব্ধ। কেবল দূরে পুকুরপাড়ের ব্যাঙ ডাকছে, আর আমগাছের পাতায় শোঁ শোঁ শব্দ। মিঠির মনে কেমন যেন একটা অদ্ভুত শান্তি—আর সঙ্গে একটু ভয়, একদম অচেনা অনুভূতি।
হঠাৎ হাওয়ায় ভেসে এল ফিসফিস আওয়াজ, যেন কেউ তার নাম ধরে ডাকছে,
— “মিঠি…”
মিঠি চমকে উঠল। প্রদীপের আলো একটু দুলে উঠল, কিন্তু নিভল না। সে চারদিকে তাকাল—কেউ নেই। বাতাস হালকা ঠান্ডা, আর আকাশে আধো চাঁদ।
হঠাৎ পেছন থেকে নরম কণ্ঠে আবার সেই ডাক,
— “ভয় পাস না মা, আমি আবার এলাম।”
মিঠি পিছন ঘুরে দেখল—আমগাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছেন সেই বৃদ্ধা। সাদা শাড়ি, রূপালি চুল, আর চোখে শান্তির দীপ্তি। তাঁর হাতে পিঁড়ি, তাতে একটা পুরোনো বই।
মিঠি কেঁপে উঠল, কিন্তু ভয়ের বদলে মনে হলো যেন খুব আপন কেউ এসেছে।
— “আপনি সত্যি ফিরে এলেন?”
বৃদ্ধা হেসে বললেন,
— “যেখানে ভালোবাসা থাকে, সেখানে আমরা ফিরে আসি। তুই যে প্রদীপটা জ্বালিয়েছিস, তাতে আমার স্মৃতি জেগে উঠেছে।”
মিঠি বলল,
— “আপনি বলেছিলেন আপনি আমার ঠাকুমার ঠাকুমা, তাই তো?”
বৃদ্ধা মাথা নেড়ে বললেন,
— “হ্যাঁ। আমি একসময় এই বাড়ির বড় বৌ ছিলাম। তোর ঠাকুমা ছোটবেলায় আমার কাছেই গল্প শুনত। আজ তোদের প্রদীপের আলো আমাকে ফিরিয়ে এনেছে। তবে ভয় নয়, বরং এক অসমাপ্ত গল্প নিয়ে।”
মিঠি অবাক হয়ে তাকাল,
— “গল্প? কিসের গল্প?”
বৃদ্ধা একটু থেমে বললেন,
— “একটা চিঠির গল্প, যা আমি জীবিত থাকতে শেষ করতে পারিনি। সেই চিঠি আজও এই আমগাছের নিচে লুকিয়ে আছে।”
মিঠির চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেল।
— “চিঠি? কোথায়?”
বৃদ্ধা আঙুল তুলে দেখালেন—আমগাছের মূলের পাশে একটা জায়গা।
— “ওখানে খুঁজে দেখিস। তাতে আছে ভালোবাসার শেষ কথা, যেটা আমি কাউকে বলতে পারিনি।”
এরপর ধীরে ধীরে হাওয়ার সঙ্গে মিশে গেলেন বৃদ্ধা। শুধু প্রদীপের আলোটা থেকে গেল উজ্জ্বল হয়ে।
মিঠি দৌড়ে গিয়ে আমগাছের গোড়ায় খুঁজতে লাগল। শুকনো পাতার নিচে পাথর সরিয়ে পেল একটা পুরোনো খাম। তাতে লেখা—“আমার মেয়ে ভবানীকে।”
সে ফিসফিস করে বলল,
— “ভবানী তো ঠাকুমার নাম…”
তার বুকের ভেতর যেন ঢেউ খেলে গেল। হাতে পুরোনো সেই চিঠি, আর চোখে এক প্রশ্ন—এই চিঠিতে কী লেখা ছিল, আর কেন তা মাটির নিচে লুকানো ছিল?
চাঁদের আলো নিভে গিয়ে উঠোনে পড়ল প্রদীপের ম্লান আলো। মিঠি জানল, আজ রাত শেষ নয়—এ এক শুরু, এক অসমাপ্ত গল্পের। #☠ভুত চতুর্দশী👻
