যে দেশে চেনা-জানা মানুষ কোনো নাই অথবা মন মানে না, শুনলেই বুকটা হাহাকার করে ওঠে, মনে আছে এগুলো? 💔
“প্রেম কি বুঝিনি” থেকে শুরু করে
“ও বন্ধু রে” গুনগুন করতে করতে
আজও মনে হয়, এই গানগুলো আমাদের জীবনের অংশ।
আর “বোঝেনা সে বোঝেনা”-র সেই পুরোনো ক্লাসিকট্র্যাক,
কানে এলেই তো মনে হয়,
ফিরে গেছি সেই দিনগুলোতে,
যখন প্রথম প্রেম,
প্রথম সিনেমা,
প্রথমবারের মতো সবকিছু,
সবকিছুর ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতো তাঁর কণ্ঠ।
হ্যাঁ, আমি বলছি জুবিন গার্গ-এর কথা।
অসমের ছেলেটা,
যার গলায় ছিল কাঁচা, ধারালো, বেপরোয়া এক আবেগ।
যে গলায় ছিল না নিখুঁততা,
কিন্তু ছিল এমন এক যন্ত্রণা,
যা সরাসরি গিয়ে বিঁধত আমাদের বুকের গভীরে।
আমাদের কৈশোরে তিনি ঢুকে পড়েছিলেন এক ঝড়ের মতো।
একটা ঝড়, যা আমাদের পুরো প্রজন্মকে বদলে দিয়েছিল।
সেই শুরুটা ছিল অনামিকা অ্যালবামে, ১৯৯২ সালে।
কিন্তু সেটা ছিল কেবল এক অ্যালবাম নয়,
অসমের সংস্কৃতিতে এক বিপ্লব।
তিনি শুধু গায়ক ছিলেন না,
এক প্রজন্মের কণ্ঠস্বর ছিলেন।
বাংলায় যখন এলেন,
প্রথমে হয়তো আমরা চিনতাম না তাঁকে।
কিন্তু একবার যখন “মন মানে না” বা “চিরদিনই তুমি যে আমার” সিনেমার গানগুলো কানে বাজলো,
তখন আর আলাদা করে নাম মনে রাখার দরকার হয়নি।
কারণ সেই গানগুলো নিজেরাই বলে দিয়েছিল,
এটা অন্যরকম কিছু।
এটা আমাদের জন্যই তৈরি।
প্রকাশ্যে তিনি যেন বলে দিয়েছিলেন, একটি নতুন সিঙ্গার এসেছে রাজত্ব করতে।
তারপর এলো “গ্যাংস্টার”-এর য়া আলী।
সারা দেশ তাঁকে চিনলো। কি অমায়িক টান সেই গলার।
কিন্তু আমাদের কাছে তিনি তখনও
“বলিউডের গায়ক” নন,
তিনি আমাদের জুবিন’দা।
অসমের ছেলেটা,
যে বাংলাকে ভালোবেসে আমাদের জন্য রেখে গেল
অসংখ্য অমূল্য গান।
কিন্তু আপনি জানেন?
প্রতিটি শিল্পীর বাইরের হাসির আড়ালে
ভেতরে লুকিয়ে থাকে অনেক ভাঙন।
খবরের কাগজে আসতে লাগলো তাঁর অসুস্থতার কথা,
বিতর্ক, নেশার ছায়া।
লাইভ শো-তে আগের সেই ধার
ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে গেল।
আমরা ভক্তরা দূর থেকে তাকিয়ে থাকতাম
আর ভাবতাম,
“ইশ, যদি আবার সেই পুরোনো জুবিন ফিরে আসে!”
কিন্তু ভাগ্য অন্য কিছু লিখে রেখেছিল। এই দিনটা যেন কল্পনাই করতে পারিনি আমরা।
১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫।
সিঙ্গাপুরের সাজানো শহরে,
স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে
হঠাৎই শেষ হয়ে গেল তাঁর জীবনের গল্প।
এক আকস্মিক দুর্ঘটনায়
নিঃশব্দে চলে গেলেন তিনি।
যিনি সারা জীবন ঝড়ের মতো বেঁচেছিলেন,
তিনি শেষ মুহূর্তে হেরে গেলেন
সমুদ্রের শান্ত গভীরতার কাছে।
তাঁর এই অল্প বয়সে চলে যাওয়াটা
মন থেকে মেনে নিতে পারছি না কিছুতেই।
মনে হচ্ছে যেন কোনো আপনজনকে হারিয়েছি।
এটা শুধু একজন শিল্পীর মৃত্যু নয়,
এটা আমাদের নিজের জীবনের
একটা অধ্যায় হারিয়ে যাওয়া।
কারণ আমরা শুধু তাঁর গান শুনিনি,
আমরা তাঁর গান দিয়ে বেঁচেছি।
আমাদের কৈশোর,
আমাদের প্রেম,
আমাদের ভাঙা হৃদয়,
আমাদের উদযাপন,
সবকিছুর সঙ্গে তাঁর কণ্ঠ মিশে গেছে।
আজ যখন রাতে একা বসে
“ও বন্ধু রে” শুনি,
অথবা “বোঝেনা সে বোঝেনা” বাজে হঠাৎ,
মনে হয় তিনি এখনও আছেন,
আমাদের একেবারে কাছেই।
কিন্তু বাস্তব বড় নির্মম,
সেই কণ্ঠ,
যা একদিন আমাদের কাঁদিয়েছিল আর হাসিয়েছিল,
আজ নিঃশব্দ।
তবু জুবিন গার্গের গল্প এখানেই শেষ নয়।
তাঁর গান থাকবে,
তাঁর সংগ্রামের কথা থাকবে,
আর আমাদের স্মৃতির ভাঁজে
চিরকাল বেঁচে থাকবে তিনি।
তিনি আমাদের শিখিয়েছেন,
শিল্পীও মানুষ।
তাঁদেরও ভাঙন আছে,
আসক্তি আছে,
অন্ধকার আছে।
কিন্তু তিনি আরও শিখিয়েছেন,
ভালোবাসা দিয়ে, গান দিয়ে
একটা প্রজন্মকে গড়ে তোলা যায়।
তাঁকে আমরা মনে রাখবো
তাঁর সেরা গানগুলোর জন্য,
আর ভালোবাসবো তাঁর অসম্পূর্ণতার জন্যও।
কারণ দিনের শেষে,
জুবিন গার্গ কেবল একজন গায়ক নন,
তিনি আমাদের বেড়ে ওঠার এক অধ্যায়।
এক অসমাপ্ত বিদায়ের গল্প,
যা পড়তে পড়তে
আজও চোখ ভিজে যায়। 💔 #প্রয়াত জুবিন গর্গ #rip #জুবিন গর্গ #life hurts 💔🥺 #miss you

