#ভূত_চতুর্দশীর_রাত
পর্ব ৩ : হারানো চিঠি
ভোর হয়নি তখনো, তবে আকাশে ফিকে আলো ফুটছে। মিঠি সারারাত ঘুমোয়নি। হাতে সেই পুরোনো খামটা—যেটা আমগাছের গোড়ার নিচে পেয়ে গেছে। চিঠিটা সময়ের সঙ্গে হলুদ হয়ে গেছে, তবু অক্ষরগুলো যেন আজও জীবন্ত।
চিঠির উপরে লেখা — “আমার মেয়ে ভবানীর জন্য।”
ভবানী—মানে তার ঠাকুমা। মিঠির বুকের ভেতর কেমন একটা মিষ্টি ভয় জমেছে। এত বছর পর মৃত এক মানুষের লেখা চিঠি হাতে পেয়ে কেউই নিশ্চিন্ত থাকতে পারে না।
মা লাবণ্য তখন উঠোনে পানি ছিটাচ্ছিলেন। মিঠি গিয়ে ধীরে বলল,
— “মা, কিছু দেখবি?”
লাবণ্য অবাক হয়ে বললেন,
— “সকালে সকালেই কী হাতে এনেছিস?”
মিঠি খামটা বাড়িয়ে দিল। মা চোখ মেলে দেখে চমকে উঠলেন।
— “এটা তো পুরোনো খাম! এই নামটা... ভবানী মানে তো আমার মা!”
চিঠিটা খুলে পড়া শুরু করলেন মা। কাগজটা প্রায় ভেঙে যাচ্ছিল। অক্ষরগুলো বাঁকা, কিন্তু স্পষ্ট। তাতে লেখা—
> “আমার প্রিয় ভবানী,
যদি এই চিঠি তুই একদিন পাস, জেনে রাখবি—আমি তোর উপর কোনো অভিমান নিয়ে যাচ্ছি না। আমি শুধু চাই তুই আলোয় থাকিস। মানুষ ভয় পেয়ে অন্ধকারে ঢাকে তাদের ভালোবাসা, কিন্তু তুই যেন ভয় না পাইস কখনো। আমি তোর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারিনি, সমাজ থামিয়ে দিয়েছিল, কিন্তু তুই যেন মেয়েদের জন্য আলো জ্বালাস।
— তোর মা, অনিমা।”
চিঠির শেষ লাইন পড়ে লাবণ্যের চোখ ভিজে গেল। মিঠিরও গলা শুকিয়ে এলো।
— “মা… দিদিমার ঠাকুমা অনিমা ছিলেন, তাই তো?”
লাবণ্য মাথা নেড়ে বললেন,
— “হ্যাঁ, মা। তিনিই গ্রামের প্রথম মহিলা যিনি মেয়েদের শেখানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তখনকার মানুষ তাঁকে পাগল বলেছিল। হয়তো এই চিঠিটা তিনি কারও হাতে পৌঁছাতে পারেননি।”
মিঠি হালকা গলায় বলল,
— “কিন্তু তিনি তো ফিরে এসেছেন, মা। প্রদীপ নিয়ে।”
লাবণ্যের চোখে বিস্ময়।
— “কি বলছিস?”
মিঠি ধীরে ধীরে সব বলল—কীভাবে বৃদ্ধা এসেছিলেন, কীভাবে প্রদীপ দিয়েছিলেন, আর কেমন করে তিনি চিঠির কথা বলেছিলেন।
মা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর বললেন,
— “মা হয়তো এই ভূত চতুর্দশীর আলোয় ফিরে এসেছিলেন, যেন তাঁর শেষ কথা পৌঁছে দিতে পারে। আলোটা তুই রাখবি, মিঠি। এটা শুধু প্রদীপ নয়—এটা আশীর্বাদের প্রতীক।”
বাইরে তখন সূর্য উঠছে। পাখিরা ডাকছে, আর প্রদীপের আলো এখনও জ্বলছে। মিঠি জানে, এই গল্প এখানেই শেষ নয়। চিঠিটা যেন এক নতুন পথের শুরু।
হয়তো অনিমা দিদিমার অসম্পূর্ণ স্বপ্নটা এবার ও-ই পূরণ করবে—মেয়েদের জন্য আলো জ্বালিয়ে।
#☠ভুত চতুর্দশী👻
