#ভূত_চতুর্দশীর_রাত পর্ব ৫ : শেষ আলো
বিজনপুরে আজ আবার ভূত চতুর্দশী। এক বছর পেরিয়ে গেছে, তবুও গ্রামের মানুষ এখনো এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করে থাকে। প্রতিটি উঠোনে আলো, প্রতিটি ঘরে মৃদু সুরে মন্ত্রপাঠ, আর মেয়েরা জ্বালায় চৌদ্দ প্রদীপ—যেমনটা এক বছর আগে মিঠি শুরু করেছিল।
মিঠি এখন গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতা করে। মেয়েদের শেখায়, লেখাপড়ার পাশাপাশি সাহসী হতে। উঠোনের এক কোণে এখনো রাখা আছে সেই প্রদীপ—যেটা বৃদ্ধা তাঁকে দিয়েছিলেন। তাতে ঘি ঢালছে সে নিজ হাতে, যেন নতুন করে প্রাণ দিচ্ছে পুরোনো আলোর।
হাওয়ায় ভাসছে গন্ধ—চন্দন, ধূপ আর স্মৃতির মিশ্রণ। মিঠি আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসল।
— “আজ আবার তুমি আসবে তো?”
ঠিক তখনই বাতাস থেমে গেল এক মুহূর্তের জন্য। আমগাছের নিচে আলো ফুটে উঠল, যেন কেউ দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। মিঠি চোখ কুঁচকে দেখল—সেই একই শাড়ি, সেই একই মায়াবী মুখ।
বৃদ্ধা ধীরে ধীরে এগিয়ে এলেন।
— “তুই যা শুরু করেছিলি, সেটা এখন গ্রামজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। আমার অপূর্ণ স্বপ্ন তুই পূরণ করেছিস, মেয়ে।”
মিঠির চোখে জল।
— “আপনি চলে গিয়েছিলেন, তবুও মনে হলো আপনি সবসময় পাশে ছিলেন।”
বৃদ্ধা হাসলেন মৃদু।
— “আমরা চলে যাই না, মিঠি। আমরা থেকে যাই তাদের মধ্যে, যারা আলো জ্বালাতে জানে।”
একটা নরম হাওয়া বইল। প্রদীপের আলোটা দুলে উঠল, কিন্তু নিভল না। বরং আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল। চারদিক যেন আলোকিত।
বৃদ্ধা বললেন,
— “এই আলো এখন তোর নয়, এই গ্রামের। তুই শুধু মনে রাখবি—কখনো অন্ধকারকে ভয় পাবি না।”
তারপর ধীরে ধীরে তিনি মিশে গেলেন সেই আলোয়, ঠিক যেমন সকালে সূর্য মিশে যায় কুয়াশার ভেতর।
মিঠি দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ, তারপর প্রদীপটা তুলে রাখল স্কুলের বারান্দায়। চারপাশে মেয়েরা হাসছে, কেউ পড়ছে, কেউ ছবি আঁকছে। বাতাসে কোনো ভয় নেই, আছে কেবল আশার গন্ধ।
রাত নামল, আকাশে অসংখ্য তারা। মিঠি একটুখানি চোখ বন্ধ করে ফিসফিস করে বলল,
— “ভূত চতুর্দশীর আলো এখন আমাদের ভবিষ্যৎ।”
দূরে পুকুরপাড়ে দেখা গেল প্রদীপের সারি—যেন হাজারো আত্মা আশীর্বাদ দিচ্ছে এই গ্রামকে, আর মিঠির মুখে সেই আলোয় ফুটে উঠল এক নির্ভয় হাসি।
শেষ।
#☠ভুত চতুর্দশী👻
