সবকিছু সামাল দিতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলা মানুষটিই ‘নারী’ পরিবার, কর্মক্ষেত্র, সন্তান, সামাজিক সম্পর্ক—সবকিছু একসাথে ধরে রাখতে গিয়ে অনেকে ধীরে ধীরে নিজের প্রয়োজন, নিজের ইচ্ছা আর নিজের মানসিক চাহিদাকে পিছনে ফেলে দেন। এই অবস্থাটি সবচেয়ে বেশি ঘটে নারীদের জীবনে। সমাজের অঘোষিত প্রত্যাশা, পরিবারের দায়িত্ব আর আবেগগত শ্রমের ভার অনেক সময় নারীদের নিজের প্রতি যত্ন নেওয়ার সুযোগই কমিয়ে দেয়। ফলে তারা অন্যদের জন্য সেরা হয়ে উঠলেও নিজের ভেতরে ধীরে ধীরে ক্লান্ত, অবহেলিত এক মানুষে পরিণত হন। নারীর ভূমিকা: বহুমুখী কিন্তু অস্বীকৃত পরিবারে নারীই সাধারণত পরিবার ব্যবস্থাপনার কেন্দ্রবিন্দু। সকালে উঠেই রান্না, সন্তানকে স্কুলে পাঠানো, বয়স্কদের দেখভাল, কর্মজীবী হলে অফিসের কাজ—সবই তার দায়িত্ব হিসেবে ধরা হয়। সমাজবিজ্ঞানীরা এটাকে বলেন “অদৃশ্য শ্রম” (Invisible Labor)। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবারে নারীরা পুরুষদের তুলনায় দৈনিক ২–৩ ঘণ্টা বেশি অদৃশ্য শ্রম দেন। বাংলাদেশের নারীদের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। বি.আই.ডি.এস (BIDS)-এর ২০২২ সালের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, গৃহকর্ম ও পরিবার পরিচালনায় নারীরা দৈনিক গড়ে ৬.৩ ঘণ্টা শ্রম দেন, যা পুরুষদের তুলনায় প্রায় তিনগুণ। এই সব কাজের মূল্য অর্থে নির্ধারিত না হলেও মানসিক চাপ, ক্লান্তি, আবেগগত দায়িত্বের ওজন নারীদের ওপর ভারী হয়ে পড়ে। মানসিক চাপ: নীরব বোঝা বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে যে নারীরা পুরুষদের তুলনায় মানসিক চাপ ও উদ্বেগে বেশি ভোগেন। কারণ— তাদের সবসময় “পারফেক্ট স্ত্রী”, “পারফেক্ট মা”, “পারফেক্ট বউমা” হতে বলা হয়। নিজেকে প্রমাণ করতে গিয়ে তারা নিজের চাওয়াগুলোকে উপেক্ষা করেন। পরিবার বা সমাজ খুব কমই নারীর আবেগগত চাপকে গুরুত্ব দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, বিশ্বে পুরুষের তুলনায় নারীরা ১.৫ গুণ বেশি ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হন, যার অন্যতম কারণ পরিবার ও সমাজের অতিরিক্ত প্রত্যাশা। অস্তিত্ব হারানোর কারণ নারীরা নিজেদের হারিয়ে ফেলেন মূলত তিনটি কারণে— দায়িত্বের চাপ পরিবার ও কর্মক্ষেত্রের দায়িত্ব এত বেশি যে নিজের সময় থাকে না। নিজেকে অগ্রাধিকার না দেওয়া ছোটবেলা থেকেই শেখানো হয়, “নিজের আগে পরিবার।” স্বীকৃতির অভাব কোটি কাজ করেও অনেকে শুধু শুনেন—“এ তো তোমার দায়িত্ব!” এই তিনটি বিষয় নারীদের ধীরে ধীরে নিজের পরিচয় ভুলিয়ে দেয়। নারীকে কেন নিজের জন্য সময় রাখতে হবে নিজের জন্য ৩০ মিনিট সময় নেওয়া মানে দায়িত্ব ফেলে দেওয়া নয়। “না” বলতে শেখা মানসিক সুস্থতার জন্য জরুরি। নিজের স্বপ্ন, পছন্দ, স্বাস্থ্য—এসবকে গুরুত্ব দিলে পুরো পরিবারই উপকৃত হয়। সন্তানেরাও শিখে যে মা সুখী থাকলে ঘরও সুখী থাকে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, যে নারী নিজের যত্ন নেন তিনি মানসিকভাবে বেশি স্থির, সম্পর্কগুলোতে বেশি স্নেহশীল এবং চাপ মোকাবিলায় সক্ষম হন। পরিবারের ভূমিকা পরিবার যদি সামান্য দায়িত্ব ভাগ করে নেয়, স্বীকৃতি দেয়, এবং নারীর সময় ও স্পেসকে সম্মান করে—তাহলে অনেক নারীই নিজেদের পুনরায় খুঁজে পান। স্বামী যদি প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট গৃহকর্ম ভাগ করে নেন, নারীর মানসিক চাপ ২৫% কমে (Auckland University Study)। সন্তানরা যদি ছোট কাজগুলো শেখে, নারীর দিনের সময় বাড়ে। নিয়মিত “ধন্যবাদ” বা “তুমি না থাকলে ঘর চলত না”—এই শব্দগুলো একটি নারীর মনকে আশ্চর্যভাবে হালকা করে। নারী শুধু সম্পর্ক ধরে রাখেন না—ঘর, পরিবার, ভালোবাসা, শান্তি আর মানবিকতার দাঁড়িপাল্লা সমান রাখতে কাজ করেন। কিন্তু সেই পথে হাঁটতে গিয়ে অনেকে নিজের স্বপ্ন, নিজের স্বাস্থ্য আর নিজের অনুভূতিকে পিছনে ফেলে দেন। তাই প্রয়োজন সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো, দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া এবং নারীর প্রতি গভীর সম্মান দেখানো। যে নারী সবকিছু সামলে রাখে, তাকে নিজের ভেতরটাকেও সামলানোর সুযোগ দিতে হবে। কারণ সুখী নারী মানেই সুখী পরিবার, আর সুখী পরিবার মানেই সুন্দর সমাজ। #👩 Girls special স্টেটাস 👩 #😔বাস্তব বড়ো কঠিন 😔 #Reality Of Life #life hurts 💔🥺 #ツ꧁trนē liຖēŞ༒࿐🙂🙂